উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭/০১/২০২৪ ৯:৩৮ এএম

দেশে অবাধে ঢুকছে মাদক। প্রশাসন ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় একের পর এক মাদকের বড় চালান দেশে আসছে। মাঝে মাঝে দু’একটি বড় চালান ধরা পড়ছে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। শুধু বড় চালানই নয় মাদকের ছোট ছোট চালানও পৌছে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেখান থেকে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে সব শ্রেনীর মানুষের হাতে।

বিশেষ করে যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এই মাদক। অপরদিকে রাজধানী থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত কিশোর গ্যাং তৈরী হয়েছে। তারা লেখাপড়া বাদ দিয়ে একদিকে মাদক বেচাকেনা করছে অপরদিকে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। খুনসহ বড় বড় অপরাধের সঙ্গেড় তারা জড়িয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে চাঞ্চল্যকর বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনায় তাদের গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিভাবকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সুত্র:দৈনিক ইত্তেফাক

এদিকে শত কোটি টাকা কোকেন চালানের সঙ্গে জড়িত একজনকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি বিশেষ দল সনাক্ত করেছে। তাকে গ্রেফতারে চলছে অভিযান। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও চিকিত্সকরা বলছেন, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা আছে বলেই মাদক অবাধে দেশে আনতে পারছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। যারা এই মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত তারাও বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক। তারা যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

একাধিক শিক্ষক উদ্বেগ প্রকাশ করে ইত্তেফাককে বলেন, আমাদের চোখের সামনে তরুণ ও কিশোররা ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। যা সত্যিই আতঙ্কের। এটা রোধ করার কেউ নাই। তাই মাদককে নির্মূল না করলে এই তরুণ সমাজ আস্তে আস্তে যেন নির্মূলের দিকে যাচ্ছে। একজন শিক্ষক হিসাবে নিজেকে অপরাধী মনে করছি।

যারা জড়িত তারাও মাদক কেনাবেচার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। এই গ্যাংয়েরর সদস্যরা এমন কোন অপকর্ম নাই যে করছে না। আর যারা মাদক সেবন করেন তাদের ভেতরে নেই কোন অনুভূতি। যে কোন অপরাধ তারা করে বেড়াচ্ছেন। শুধু কিশোর গ্যাংই নয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও প্রচুর সংখ্যক মাদক সেবী, ও বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। বাদ যায়নি মেডিকেল কলেজের এক শ্রেনীর শিক্ষার্থীরাও। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষও মাদকের নেশায় আসক্ত। অবাধে মাদকের চালান সহজে দেশের সবখানে নিরাপদে পৌছে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে সড়ক ও নৌপথের প্রতিটি পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেনীর কর্মকর্তা ও এক শ্রেনীর সদস্যদের মাদক ব্যবসায়ীরা নিয়মিত মাসোহারা দেয়। তবে মাঝে মাঝে দু’একটি চালান পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে দেখানো হয় যে তারা মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন-এমন অভিযোগও রয়েছে।

এই মাদক পাচার ও কেনাবেঁচা বন্ধ করা না যায় তাহলে তরুণ সমাজ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যা একসময় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারের জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নের পাশাপাশি কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নাই বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। মাদক ব্যবসায়ী যেন কোন রাজনৈতিক দলে আশ্রয়-প্রশয়ে না থাকেন সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে বলেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। দলীয় পরিচয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা দল ও সরকারের জন্য বিপদজনক।

এদিকে টেকনাফ ও উখিয়াসহ ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে মাদক দেশে প্রবেশ করছে। এই মাদক চোরাচালানের কাজে প্রশাসন, আইনশৃখলা বাহিনী ও এক শ্রেনীর রাজনৈতিক লোকেরা জড়িত। মিয়ানমার দিয়েই মাদকের বড় বড় চালান দেশে আসছে। টেকনাফের যেসব ব্যক্তিরা এই মাদকের ব্যবসায় জড়িত তাদের সামাজিক অবস্থানও এখন পাল্টেছে। আগে টিনের ঘর থাকলেও এখন পাচ তলা দালান কোঠার মালিক। এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রতিনিধি এবং একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বলেন, টেকনাফের এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্ধারন করতেন। কিংবা টুকটাক ছোটখাট দোকানে দিনমজুরের কাজ করতেন। ছোটখাট দোকান দিয়ে রাস্তার পশে চা বিক্রি করতেন। অন্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আজ সেই সকল পরিবারের সদস্যরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। টেকনাফের প্রতিটি এলাকায় দৃষ্টিনন্দন দালানকোঠা হয়েছে। কয়েক কোটি টাকার মূল্যের গাড়ি দিয়েও তারা চলাচল করেন। রাজধানী ছাড়াও দেশের বাইরে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্টান রয়েছে। তাদের অনেকের সন্তানও বিদেশে লেখাপড়া করেন। তাদের দৃশ্যমান মিল, কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নাই। উচ্চ পদস্থ কোন চাকরিও করে না। তারা বলেন, এসব টাকার মালিক হয়েছেন শুধু মাদক ব্যবসা করে। এটা তাদের মূল ব্যবসা। ওই টেকণাফ এলাকার প্রায় ৭০ ভাগ লোকই মাদক ব্যবসা করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাও কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকার একাধিক সাবেক এমপিসহ শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নামও রয়েছে।

২০১৯ সালে দেওয়া এক তালিকায় টেকনাফের সাবেক এক এমপির চার ভাইসহ মাদক ব্যবসায় জড়িত ১০২ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরে জামিনে বেরিয়ে আবার মাদক ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, টেকনাফ দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক আসে। সেখান থেকে বিভিন্ন রুটে এই মাদক রাজধানী ছাড়াও দেশের সমস্ত জেলা উপজেলায় বিনা বাধায় পৌছে যায়। টেকনাফ থেকে নৌপথে পিরোজপুর, মংলা ও খুলনাসহ মাদকের বড় বড় চালান বিভিন্ন স্থানে পৌছে যায়। যদিও এসব চালানের বেশিরভাগই নির্বিঘ্নে চলে যায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে। যদিও অনেক সময় গভীর সমুদ্রে মাদকের দুই একটি বড় চালান আটকের তথ্যও রয়েছে। শুধু সড়ক বা নৌপথেই নয় এখন মাদকের বড় বড় চালান আসছে আকাশ পথেও। বিমানবন্দরের এক শ্রেনীর কর্মকর্তা-কর্মচারী এই মাদক চোরাচালানে জড়িত।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোস্তাকীম বিল্লঅহ ফারুকি বলেন, শত কোটি টাকার কোকেন চোরাচালানে যারা জড়িত তাদের দ্রুত ধরা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে আমাদের মূল জায়গা ঠিক করতে হবে। নইলে একটি বিভঅগের পক্ষে মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও চিকিত্সকরা বলছেন, যেভাবে মা্দক ছড়িয়ে পড়ছে তাতে সামনে ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলসহ সকল পেশার মানুষ একসঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাহলে সন্তানরা সর্বনাশা মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা পাবেন। তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক থাকবে।

কক্স্রবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, টেকনাফ থেকে যেসব স্থান দিয়ে মাদক প্রবেশ করেছে সেসব জায়গায় তাদের চেকপোস্ট রয়েছে। যারা মাদক পরিবহন করে তাদেরকে আমরা মাঝেমধ্যে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।

পাঠকের মতামত

যুক্তরাজ্যের প্রেস মিনিস্টার হলেন সাংবাদিক আকবর হোসেন

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন বিবিসি প্রতিনিধি আকবর হোসেন মজুমদার। রবিবার ...

আমাদের নিয়ত সহিহ, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হলেই নির্বাচন: সিইসি

অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন নতুন নির্বাচন কমিশনার ...

পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ...